Friday, November 27, 2015

বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ) পর্ব ২

বিবর্তন নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক ভুল ধারণা থাকে। অনেক সময় আমরা এর সম্পর্কে না জেনেই একটা উপসংহারে চলে যাই। বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ পর্ব ১ ) – এ ব্লগে বিবর্তন সম্পর্কে বেসিক ভুল ধারণা ও কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে একটু জটিল প্রশ্ন-উত্তর থাকায় প্রথম পর্বটি আগে পড়ে নিলে ভাল হয়। 
ব্লগটিকে আমার মূল ইচ্ছা ছিল ব্লগার ভাইয়ের সহযোগিতায় আরও কিছু কনফিউশনগুলো সামনে নিয়ে আসা ও সেগুলো ব্লগে আলোচনা করা। সৌভাগ্যবশত ব্লগের কমেন্টে অনেকগুলো প্রশ্ন আমি পেয়েছি। সবার কমেন্ট পড়ার সময় হয়ে উঠে না। তাই সেই উত্তরগুলো নিয়ে সুগঠিতভাবে দ্বিতীয় পর্বটি পাবলিশ করলাম। তাছাড়া আরও কিছু জিনিস যা মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা কাজ করে সেটাও ব্লগে লেখার চেষ্টা করবো। এরপরও আমি আশা রাখি প্রশ্ন থাকবে, মানুষ প্রশ্ন করবে। কারণ প্রশ্ন করে, যাচাই করে সঠিক ও পরীক্ষিত জিনিসই সত্য হিসেবে মানাই আসলে জ্ঞানী মানুষের বৈশিষ্ট্য।
২১। পৃথিবীর প্রথম প্রাণ যদি জলে হয়ে থাকে। তবে জলের প্রাণীর তো ফুলকা থাকে, তাদের তো আর ফুসফুস নেই। কীভাবে জলের প্রাণী স্থলে এসেছিল?
ফসিল প্রমাণ যে জলের প্রাণীর স্থলে আসার প্রথম প্রমাণ পায় না আদি যুগের লাংফিশ (protopterus annectens) এর মত এক ধরনের প্রাণী। এদের ফুলকাও ছিল, আবার ফুসফুসও ছিল। পানিতে তারা ফুসফুসকে মুলত ব্যবহার করতো বাতাস ব্যবহার করে পানিতে কম্পন তৈরি করতে। তাদের আকৃতিও ছিল চারপায়ী প্রাণীদের খুব কাছাকাছি। (উল্লেখ্য যে, এই প্রাণ সকল Tetrapads এর সাধারণ পূর্বপুরুষ)। তাদের কংকালের ফসিল থেকে বুঝা যায় তাদের ফুসফুস খুব ছোট ছিল। মানে তারা খুব বেশি সময় স্থলে থাকতে পারতো না। পরে কোটি কোটি লেগেছে লাংফিশ এর জল থেকে সম্পূর্ণ স্থলে বাস করা যোগ্য প্রজাতিতে বিবর্তিত হতে।
২২। আমরা কিন্তু কোনোভাবেই প্রক্রিয়াটিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারছি না। বিজ্ঞান তো পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোনো কথা গ্রহণ করে না। তাহলে কীভাবে বিবর্তনকে সায়েন্টিফিক ফ্যাক্ট বলতে পারি?
বিবর্তন প্রকৃতি ও গবেষণাগার – দুই জায়গাতেই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। বিবর্তন খুবই ধীরগতির প্রক্রিয়া। মানুষের এইপ (Ape) প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সময় লেগেছে। বেশ কিছু ক্ষুদ্র প্রাণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করে বিবর্তনের চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়েছে । এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বিবর্তন প্রকৃতিতে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, সেখানেও বিবর্তনের প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া প্রায় ১২টি ভিন্ন প্রক্রিয়া যেটা দিয়ে বিবর্তন সঠিক কিনা যাচাই করা হয়, সেই পরীক্ষণগুলোর সত্যতা ও নির্ভুলতা পরীক্ষা করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ দিয়েই। আর সেই পদ্ধতি দিয়েই বিবর্তনকে যাচাই করা হয়। এই সবগুলো প্রিমিসেসই সাপোর্ট করে বিবর্তন ফ্যাক্ট।
২৩। এমন কোন প্রমাণ আছে যেখানে বোঝা যায় একটা প্রজাতি অন্য প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে (পর্যবেক্ষণ সহ)?
হ্যাঁ, অবশ্যই। Artificial Section বা কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে যেই প্রাণীগুলো বিবর্তিত হয়েছে তাদের নমুনা পরীক্ষা করে জীববিজ্ঞানীরা পরীক্ষার মাধ্যমে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে বিবর্তিত হবার প্রমাণ পেয়েছেন। বিভিন্ন প্রজাতির গবাদি পশু, শস্য। এই সব অধিকাংশই বিগত মাত্র কয়েক শতাব্দী আগেও ছিল না।
২৪। যদি কোনো পর্যবেক্ষণ না থাকে তবে বিজ্ঞান একে ‘বিশ্বাস’ বলে। বিবর্তনের কোনো পর্যবেক্ষণ যদি না থাকে তবে এটাকে কি এক ধরনের ‘বিশ্বাস’ বলা যাবে?
বিজ্ঞান বিশ্বাস নিয়ে কাজ করে না। পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণও যাচাই নিয়ে কাজ করে। প্রশ্নকর্তার দেয়া সংজ্ঞার মতে “পর্যবেক্ষণ না থাকলে সেটা যদি ‘বিশ্বাস’ হয়”, তাহলে বিবর্তনকে বিশ্বাস বলা যাবে না। কারণ, বিবর্তনের একাধিক শাখায় অনেক প্রজাতির প্রাণের বিবর্তন পরীক্ষার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ বা অবজারভেশন করা হয়েছে।
আর অক্সফোর্ড ডিকশনারির মতে “বিশ্বাস” হচ্ছে কোনো কিছু সঠিক মনে করা, প্রমাণসহ অথবা ছাড়া। সেই হিসেবে দেখলে বিবর্তন বিশ্বাস। কেননা প্রায় ১২টি ভিন্ন স্বতন্ত্র পরীক্ষা বিবর্তন সমর্থন করে। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে একে সত্য মনে করা “প্রমাণসহ বিশ্বাস”।
২৫। লুই পাস্তুর প্রমাণ করেন জড় থেকে প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ত সূচনা সম্ভব নয়। তাহলে প্রথম প্রাণ কিভাবে আসলো ?
লুই পাস্তুর তার ল্যাব এ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যেটা বের করেছেন সেটা একদিনে যেমন বিবর্তনকে সমর্থন করে অন্যদিকে প্রথম প্রানের ব্যাপারটা সমর্থন করে না। সেই সময় মানুষ মনে করতো প্রায় ৬০০০ বছর আগে অলৌকিকভাবে সব প্রান ও প্রজাতি শুরু হয়েছিল যাকে বলা হত “Spontaneous Generation” , তার এই পরীক্ষা সেই বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণ করে, যেটা বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে। অন্যদিকে প্রথম প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ত অস্তিত্বময় হওয়া তার প্রমাণের বিরোধী। উনি Swan-Neck Flask এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার উপর নির্ভর করে এই উপসংহারে আসেন।
পৃথিবীর প্রথম প্রাণ ৩.৪ বিলিয়ন বছরের মধ্যে সবচেয়ে সরলতম প্রাণ ছিল। ক্লাসিক্যাল ফিজিক্সকে যেমন কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর সাথে তুলনা করলে চলবে না, ঠিক তেমনই প্রথম প্রাণও নিপাতনে সিদ্ধ নিয়ম থেকেই এসেছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা Abiogenesis এর মাধ্যমে সেটা হয়েছে। ইত মধ্যে ক্রেগ ভ্যানটার ল্যাবে Abiogenesis এর সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন। উল্লেখ্য যে, এটা এখনো হাইপোথেসিস। আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে আমরা সমৃদ্ধ একটি থিউরি পাব।
২৬। প্রায় ৫ শতাধিক বিজ্ঞানী ইভোলিউশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । এরপর আমরা কিভাবে বিবর্তনকে ফ্যাক্ট বলতে পারি ?
Answers in Genesis নামের একটি অলাভজনক খ্রিস্টান রিসার্চ ফাউন্ডেশন একটি স্বাক্ষরনামা প্রকাশ করেন যেখানে প্রায় ৫০০ জনের মত বিজ্ঞানী বিবর্তনে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এই ইস্যুকে দেখিয়ে অনেকেই বলেন “বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিবর্তন নিয়ে মতবিরোধিতা আছে। যেখানে আমরা কিভাবে এটাকে ফ্যাক্ট বলতে পারি।
প্রথমত এটা আমরা সবাই বুঝি, বিজ্ঞান কোন গণতন্ত্র নয়। এখানে পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও পরীক্ষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলই নির্ধারণ করে কোনো কিছু ফ্যাক্ট নাকি হাইপোথেসিস নাকি ভুল। যারা যারা বিবর্তনবাদকে সমর্থন করেন না, তারা এর কাউন্টার কোনো প্রমাণনির্ভর থিউরি প্রদর্শন করেননি। সেটা সবই ছিল তাদের বিশ্বাসের ব্যাপার। আর ব্যাক্তিগত বিশ্বাস বিজ্ঞানকে প্রভাবিত করে না। এরপরও আমাদের উচিত যে কোনো ব্যাপারে সন্দেহ রাখা, এমনকি বিবর্তনের ব্যাপারেও। কারণ, এটাই সঠিককে টিকিয়ে রাখে আর ভুলকে ত্যাগ করতে শিখায়।
একটা মজার ব্যাপার শেয়ার করি, Answers in Genesis এর সেই ৫০০ জনের লিস্টের পর সাইন্টেফিক এমেরিকা বিবর্তনকে সমর্থন করে এমন বিজ্ঞানীদের লিস্ট বের করে। কিন্তু ওরা ঠিক করলো, সমগ্র সাইন্স কমিউনিটি না করে বরং শুধু “স্টিভ” নামের বিজ্ঞানীদের স্বাক্ষর নেই। যেটা কিনা মার্কিন বিজ্ঞানীদের মাত্র ১% এর কাছাকাছি। শুধু “স্টিভ” নামেরই ২০০ জনের উপর বিবর্তন সাপোর্ট করেন।
২৭। রক্তখেকো প্রাণীগুলোর আকৃতি মানুষের তুলনায় ছোট ছোট ( মশা, জোক প্রভৃতি )। প্রকৃতিতে এগুলোর অস্তিত্ব সুদৃঢ় করতে এরা কেন ঈগলের মত বড় আকৃতিতে বিবর্তিত হলো না ?
বিবর্তন কোনো উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য হয়না। বরং সেই জেনেটিক ইনফোই টিকে থাকে যেটা পরিবেশে বেশি খাপ খেতে পারে। মশা না জোঁক বা অন্য প্রাণী যেটা আমরা ভাবছি অন্যরকম হলে হয়তো তারা পরিবেশে আরও ভাল খাপ খেতো আসলে সেই মিউটেশন তারা পায়নি বা সেটা ন্যাচারাল সিলেকশনে টিকেনি। নিচের ভিডিওটি দেখলে আশা করি ভুল ধারণাটি চলে যাবে।
কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব সুদৃঢ় করার জন্য তার আকারই সহায় নয়। tardigrade এর কথা চিন্তা করি। এরা পানির ফোটা থেকেও ছোটো, অথচ অথচ পৃথিবীর মহাবিপর্যয়গুলোতে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়নি।
বায়োলজিস্টদের কাছে এই প্রাণী এতই বিখ্যাত যে কমিক্সেও এরা জায়গা করে নিয়েছে :)
২৮। বানর থেকে যদি মানুষের উৎপত্তি হয়ে থাকে , তাহলে আমরা গহীন অরণ্যের আর কোনো বানরকে বিবর্তিত হয়ে লেজ খসে মানুষে রূপান্তরিত হতে দেখি না কেন ?
এই প্রশ্ন শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত! প্রথমত, আমরা বানর থেকে আসিনি। বানর ও মানুষ উভয়ই কমন পূর্বপুরুষ থেকে ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, হোমিনিডদের মধ্যে রাতারাতি লেজের বিলুপ্তি হয়নি। সেটা ঘটেছে প্রায় ৮-১০ মিলিয়ন বছরের ক্রমশ ধারায় যেখানে মানুষের প্রথম সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে। উল্লেখ্য যে, আমাদের এনাটমিতে টেইল বোন (লেজের হাড়) প্রমাণ করে যে আমাদের পূর্বপুরুষের লেজ ছিল।
২৯। বিবর্তনের ফসিল প্রমাণের মাঝে অনেক মিসিং লিঙ্ক আছে। এমন কি হতে পারে যা ফসিল পাওয়া গিয়েছে সব অন্য প্রজাতির বানরের। মানুষের না ?
মিসিং লিঙ্ক বলতে আসলে কি বুঝানো হচ্ছে, সেটা আসলে আগে জানা দরকার। ফসিল প্রমাণ সেটারই পাওয়া যায় যেটা প্রকৃতিতে একেবারে মিশে যায়নি। ধরুন, আজ থেকে এক লক্ষ বছর পর মানুষ আপনার ফসিল প্রমাণ পেল, আর আপনার দাদার ফসিল প্রমাণ পেল। দুইজনের সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা গেল আপনি ও আপনার দাদা সম্পৃক্ত। এখন আপনার বাবার ফসিল হয়নি, তার সবকিছু মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। অবশই এখানে মিসিং লিংক আছে। তার মানে নেই না যে সম্পৃক্ততা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
একটা সময় ছিল আজ থেকে প্রায় দেড় শত বছর আগে যখন প্রাণীর আকার, খাদ্যঅভ্যাস, প্রজনন আর ফসিল প্রমাণ দেখে ধারনা করা হত কোন প্রাণীর সাথে কোনটি সম্পৃক্ত। ডিএনএ এর তুলনা করার পরীক্ষা আসার পর এখন আমরা শক্তভাবে লক্ষ কোটি বছরে বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রাণীর সাথেও আমাদের সম্পৃক্তটা জানতে পেরেছি।
৩০। মানুষের মধ্যে যে বুদ্ধিমত্তা আছে সেটা অন্যপ্রাণীদের মধ্যে নেই। এটা কি প্রমাণ করে না যে আমরা বিবর্তন থেকে আসিনি?
না। বরং বিবর্তনই আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে বিকশিত করতে সাহায্য করেছে। হমিনিডদের মাথার খুলি তুলনামুলক বড় ছিল। লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের পর আমাদের মগজ আমাদের শরীরের অনুপাতে অনেক বড় আকার পায়। সেটা হমিনিডদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিকাশ লাভ করে। সেই হমিনিডই টিকে থাকতে পেরেছিল তার সুক্ষবুদ্ধিমত্তা ছিল। ফলে সেই জেনেটিক ইনফো চলেই এসেছে। আমাদের আগের প্রজাতির মধ্যেও আমরা বুদ্ধিমত্তার ছোঁয়া পাই। homo habilis কে আমরা হেন্ডিম্যান বলি। কারণ, সেই সময় তারা ধারালো হাতিয়ার ব্যবহার করা বুঝেছিল। ধীরে ধীরে আমরা আগুন আবিষ্কার করি।
একতাবদ্ধ থাকা ও কমপ্লেক্স আবেগ অন্যদের বুঝানোর জন্য আমাদের বিচিত্র শব্দ তৈরি করা দরকার ছিল। যে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে পারতো সে একসাথে টিকতে পারতো, দলে শিকার করতে পারতো, বাচার সম্ভাবনা বেশি ছিল। এইভাবে উন্নত স্বরযন্ত্রওয়ালারা পরবর্তী প্রজন্মে জেনেটিক তথ্য প্রেরণ করার সুযোগ পায় ও আমরা ধীরে ধীরে উন্নত বাকক্ষমতা পাই।
ফসিলগুলোতে আমরা স্বরযন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গগুলোর অবস্থার প্রমাণ পাই। তাছাড়া homo habilis এর ব্যবহৃত হাতিয়ারও আমরা আফ্রিকার অনেক গুহার মধ্যে সন্ধান পেয়েছি। এই সবই বিবর্তনের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তা প্রাপ্তিকেই প্রমাণ করে।
৩০। আর কোন প্রাণীর মধ্যে কি বুদ্ধিমত্তা আছে ? তাদের মধ্যে কি ভাষা আছে? কেননা আমরা তাদের বোবা জাত বলে থাকি!
মানুষ ছাড়া আরও বেশ কিছু প্রানির মধ্যে বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেহেতু তারা মানুষের থেকে শারীরিক গুণে ভিন্ন, তার মানে তাদেরকে মানুষের সাথে তুলনা করা (মানুষকে মানদণ্ড চিন্তা করে) সেটার ব্যাপারে দ্বিমত আছে। ডলফিন, শিম্পাঞ্জী, কাক, শিয়াল, পিঁপড়া এরা সবাই নিজেদের গুণে বুদ্ধিমান।
ভাষা স্বজাতিদের সাথে মনের ভাব প্রকাশের একটা মাধ্যম আর এই গুণও প্রাণীদের মধ্যে আছে। তাদেরকে বোবা জাত বলা ভুল হবে।
বিঃদ্রঃ ভিডিও গুলো এখানে শুধুমাত্র আমার ব্লগ সাজানোর জন্য দেইনি, বরং সঠিকভাবে উপস্থাপিত ও রেফারেন্স অনুসৃত তথ্য আপনাদের কাছে তুলে ধরার জন্য দিয়েছি। আপনারা চাইলে ভিডিওগুলোর ইউটিউব লিঙ্ক এ গিয়ে সেগুলোর description অংশ থেকে সম্পৃক্ত রেফারেন্সগুলো পেয়ে যাবেন। আর অবশ্যই বিবর্তন নিয়ে আপনার প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করবেন। সবার সহযোগিতায় আমরা সঠিক জ্ঞানকে আলিঙ্গন করবো, সেই আশাই রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে।

বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ) পর্ব ১

বিবর্তন নিয়ে আমাদের সকলেরই অনেক কৌতূহল ও অজ্ঞতা আছে। অনেকেই একে হাইপোথিসিস বলে উড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে অনেকে একে থিউরি অফ গ্র্যাভিটির মত ফ্যাক্ট মনে করে। থিউরি, ফ্যাক্ট ও হাইপোথিসিস এর গোলকধাধা তো আমাদের মধ্যে আছেই। অনেকে ধর্মের কথা বলে এই বিষয় থিউরি হোক বা না হোক একে অবান্তর একটা বিষয় বলে টপিক থেকে সরে আসে। যেটাই হোক, বিবর্তন নিয়ে মানুষের কনফিউশন আর প্রশ্ন নিয়েও আমার এই ব্লগ। আশা করি বেসিকগুলো কভার হবে আর প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট এ পাবো, যা পরে এডিট করে ব্লগে যোগ করা হবে।
(১) বিবর্তন কী?
আক্ষরিক অর্থে বিবর্তন বলতে আমরা কোনো কিছু সময়ানুক্রমে এক রূপ থেকে অন্য রুপে যাওয়ার সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে বুঝায়। ব্যবহারিকভাবে, বিবর্তন বলতে আমরা অরগানিক বিবর্তন বা প্রানের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় আসার সামগ্রিক প্রক্রিয়াই বুঝে থাকি।
(২) বিবর্তন কিভাবে হয়?
বিবর্তন প্রধান দুইটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়।
ক। জেনেটিক মিউটেশন
খ । ন্যাচারাল সিলেকশন
ক। মিউটেশন
মিউটেশন হচ্ছে প্রাণীর প্রজনন ও রেপ্লিকেশনের সময় ডিএনএ-তে পরিবর্তন আসা। আর ডিএনএ আমাদের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে রাখে। যখন ডিএনএ-তে পরিবর্তন আসে তখন প্রজননের সময় নতুন প্রাণের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা দেয়। যেমন কুমিরের ডিমে মিউটেশনের ফলে হয়ত একটার আগের রঙ বেশি হলদেটে হলো বাকিদের থেকে। মিউটেশন সম্পূর্ণ র‍্যান্ডম বা দৈবভাবে হয়। পরিবেশ এর উপর কোনো প্রভাব রাখে না।
খ। ন্যাচারাল সিলেকশন
যখন কোন প্রাণী মিউটেশনের ফলে নতুন বৈশিষ্ট্য পায় তখন সে সেই পরিবেশে অন্যদের থেকে হয়তো বেশি সুবিধা বা ঝুঁকিতে থাকে। সেই প্রাণীই টিকে থাকলে পারে যে পরিবেশে সুবিধা পেয়ে এসেছে। এভাবে সুবিধাজনক জেনেটিক ইনফো ( যা ডিএনএ তে থাকে সেটা পরবর্তী প্রজন্ম বহন করতে থাকে),
যেমন – আগের উদাহরণের কুমিরগুলো ধরুন আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের কোনো এক জলাশয়ে আছে। হলদে মিউটেশন হওয়া কুমির অন্য কুমিরদের থেকে বেশি পরিবেশের সাথে মিশে থাকতে পারে। ফলে তার শিকার করা সহজ আর তার জেনেটিক ইনফো ধারণ করা সহজ। অন্যদিকে সবুজ কুমিরের শিকার ধরা কঠিন। দীর্ঘ সময় ধরে ন্যাচারাল সিলেকশন হতে হতে একসময় হলুদ জিন সম্পন্ন কুমিরই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে। সবুজরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
(৩) বিবর্তন হতে কতদিন সময় লাগে?
বিবর্তন প্রতিনিয়তই হচ্ছে। তবে সেটা খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। মানুষের জীবনকালে সেটা নিজ চোখে দেখা প্রায় অসম্ভব (মাইক্রোঅর্গ্যানিজমের বিবর্তন ছাড়া)।
বিবর্তনের গতি নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। প্রাণীর জনসংখ্যা যদি কম হয় তাহলে সেটা দ্রুত হয়। তাছাড়া নতুন মিউটেশন কতটা তুলনামুলক শক্তভাবে পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে সেটাও বিবেচ্য। অনেক সময় দুর্বল জিনও পরিবেশ বদলের কারণে টিকে যায়।
(৪) পরিবেশের সাথে প্রাণীর খাপ খাওয়ানোর জন্য কি বিবর্তন হয়?
না। বরং বিষয়টা ঠিক উল্টা। সেই প্রাণীই পরিবেশে খাপ খেতে পারে যার জেনেটিক ইনফো বা মিউটেশন পরিবেশের সাথে মানানসই হয়েছে।
(৫) প্রাণীদের যে বিবর্তন হয়েছে বা হচ্ছে সেটার প্রমান কী?
বায়োলজিস্টরা বিভিন্ন পন্থায় সেটা পরীক্ষা করে এসেছে। তার মধ্যে Comparative Anatomy, Embryology & Development, Fossil Record, DNA Comparisons, Species Distribution, Evolution Observed, Nested Hierarchies of Traits ইত্যাদি কিছু নিরপেক্ষ পরীক্ষা যার সবগুলোই বিবর্তনকে সাপোর্ট করে।
(৬) তাহলে কি সব প্রাণীই একই বড় পরিবারের অংশ?
হ্যাঁ, তবে তারা লক্ষ, কোটি এমন কি বিলিয়ন বছর আগে ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়ে ভিন্ন জাতি প্রজাতিতে চলে গিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ঠিক যেমন বাবা নির্ধারণ সম্ভব, ঠিক তেমনি হাজার লক্ষ বছর আগে বিচ্ছেদ হয়ে অন্যভাবে বিবর্তিত হওয়া প্রাণীর সাথেও সম্পর্ক প্রমাণিত হয়েছে।
(৭) সবাই বলে বিবর্তন একটা থিউরি। এটাকে সঠিক বলা যায় না। একটা ফ্যাক্ট না। এটা কি ঠিক?
বিবর্তন অবশ্যই একটি থিউরি। পাশাপাশি, এটি একটি বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট; ঠিক যেমন থিউরি অফ গ্র্যাভিটি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ থিউরি, হাইপোথিসিস, ও ফ্যাক্ট নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, বিজ্ঞানে বলা থিউরি আর নিত্যদিনে আমাদের ব্যবহার করা থিউরির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

(৮) মানুষও কি বিবর্তনের ফলে এসেছে ?
পৃথিবীর সব প্রাণীর মত মানুষও বিবর্তনেরই ফসল।
(৯) মানুষ নাকি বানর থেকে এসেছে। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে বানর এখনো কিভাবে আছে ?
মানুষ বানর থেকে আসেনি। মানুষ ও বানর একটু কমন পূর্বপুরুষ থেকে ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে। যা দেখতে না ছিল বর্তমান বানরের মত, না বর্তমান মানুষের মত। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে এপরা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে সেখান থেকে একটা হচ্ছে বানর। অন্যদিকে হমিনিডদের থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে মানুষ বা Homo Sapiens.
(১০) মানুষও যে বিবর্তনের ফলে হয়েছে এর কী প্রমাণ আছে?
লক্ষ লক্ষ বছরের অনেক ফসিল প্রমাণ ও তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে ও উপরোক্ত পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে মানুষ ৮-১০ মিলিয়ন বছর আগে শিম্পাঞ্জির সাথে কমন এক Hominoidea প্রাণী ছিল। এরপর মিউটেশন ও ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মিলিয়ন মিলিয়ন বছরে হমিনিড Australopithecus ( প্রায় ৩ মিলিয়ন বছর ) থেকে Homo habilis থেকে Homo erectus থেকে ধীরে ধীরে Homo Sapiens এ পরিণত হয়েছে।
আগের স্তরের প্রাণীর জেনেটিক ইনফো এখনো আমাদের মাঝে আছে। লক্ষ কোটি বছর আগের অনেক জেনেটিক ইনফো আজ অকেজো অবস্থায় আমাদের শরীরে রয়ে গেছে। তার মধ্যে রয়েছে –
ক) এপেনডিক্স (যেটা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে যখন পূর্বপুরুষেরা গাছে থাকতো আর শুধুমাত্র সবুজ খাদ্যের উপর নির্ভর ছিল তখন সেটা পরিপাকতন্ত্রের একটা অংশ হিসেবে কাজ করতো)
খ) টেইল বোন (জেনেটিক মিউটেশনের ফলে লেজ মিলিয়ন বছর আগেই বাহ্যিকভাবে লোপ পায় হমিনিডদের, কঙ্কাল কাঠামোতেও আসতে আসতে লোপ পেয়েছে, তবে এখনো কিছু অবশিষ্ট অংশ রয়ে গিয়েছে।)
গ) ভয়/চমকিত হওয়ার সময় লোম খাড়া হওয়া (স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে যাদের থেকে আমরা বিবর্তিত হয়েছি বলা হচ্ছে, তাদের মতও আমাদের পেশী তন্তুতে একই রকম কৌশল বিদ্যমান)
আরও কিছু জিনিস আছে যেমন দুধ দাঁত, ছেলেদের নিপল, চোখের ভিতরের পর্দা, ঢেঁকুর তোলা ইত্যাদি।
(১১) প্রাণহীন পৃথিবিতে জড় পদার্থ থেকে কী করে প্রাণের উৎপত্তি হলো?
বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো এই বিষয়টা পরিষ্কার না যে, প্রথম প্রাণ কিভাবে এসেছিলো। তবে শক্ত প্রমাণ আছে বিষয়টা প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে হয়েছিল, আর পানিতে হয়েছিল। সবচেয়ে প্রাচীন যে algae এর ফসিল পাওয়া গিয়েছে তা প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন বছর আগের। প্রথম প্রাণের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে দেখেছে এটার পিছনে chemical evolutionই সবচেয়ে শক্ত প্রিমিসেস।
অ্যামোনিয়া, ফরফোরিক লবণ, আলো, বজ্রপাত এই বিষয়গুলো প্রাথমিক ডিএনএ কমিনেশন করার জন্য প্রয়োজন ছিল, যা পৃথিবীর লাভাযুগের শেষের দিকে (গ্রহাণুগুলো একত্রিত হওয়ার প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন বছর পর) যথেষ্ট ছিল। তবে একটি মাত্র জীব থেকেই যে সব হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। পরিস্থিতি অনুকূল ছিল একাধিক এককোষী একাধিক জায়গায় গঠিত হওয়ার।
(১২) প্রানের আদিলগ্নে এককোষী প্রাণী ছিল। এখনো কিভাবে এককোষী প্রাণী থাকে। এদের ক্ষেত্রে কি বিবর্তন কাজ করে না ?
বর্তমান সময়ের এক কোষী প্রাণী ৩.৪ বিলিয়ন বছর আগের প্রাণের চেয়ে বহুগুণে জটিল। আর বিবর্তনের ফলে সেই জটিলতা এসেছে।
(১৩) মানব সভ্যতা তো প্রায় কয়েক হাজার বছর ধরে চলছে। এর মধ্যেও কি কোন বিবর্তন হয়নি? নাকি আমাদের লক্ষ বছর অপেক্ষা করতে হবে?
অনেক প্রাণীরই হয়েছে। কিছুদিন আগে আমেরিকায় একটি স্তন্যপায়ীর হাড় পাওয়া গিয়েছে যেটায় মানুষের চিহ্নও পাওয়া যায়। মানে হাতির আগের পূর্বপুরুষ মানব সভ্যতা নিজ চোখেই দেখেছে। তাছাড়া মানুষের হাতেই বিবর্তন পেয়েছে বেশ কিছু প্রজাতি। তার মধ্যে কুকুর, বিড়াল, বিভিন্ন ধরনের শস্য, বেশ কিছু গবাদি পশু উলেক্ষযোগ্য। এই ধরণের বিবর্তন প্রক্রিয়াকে বলা হয় Artificial Selection, যা ন্যাচারাল সিলেকশনের মতই।
(১৪) Artificial Selection কী?
প্রাণীদের মধ্যে সেই প্রাণী যখন টিকে থাকে যা মানুষের মাধ্যমে সুবিধা ও বেঁচে থাকার ক্ষমতা পায় ও তাদের জেনেটিক ইনফো তাদের উত্তরাধিকারের মধ্যে বহন করে যায় তাকে Artificial Selection বলে।
ধরুন ৫টা কুকুর আছে। তার মধ্যে একটা মিউটেশনের ফলে একটু বেশি লোমশ। যা হয়ত মানুষের কোনো বাচ্চার খুব পছন্দ। সে খুব আদর যত্ন করে সেটা পালন করে। ফলে অন্য কুকুর কম সুবিধা পায়। লোমশ সেই কুকুর পরবর্তীতে যার জেনেটিক তথ্য পরের প্রজন্মে বহন করায়। সংকর জাতের প্রাণীগুলো এরই ফসল।
(১৫) প্রাণীদের মধ্যে কেউ মাংসাশী, কেউ তৃণভোজী, কেউ জড়ভোজী। এরা সবাই মিলে একটা সুশৃঙ্খল খাদ্য চক্র তৈরি করেছে। যেখানে এক স্তরের প্রাণী লোপ পেলে পুরো খাদ্য চক্রের সব প্রাণীর বিলুপ্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। বিবর্তনের এখানে ভুমিকা কী?
প্রথমে জীব শুধু পরিবেশ থেকে দরকারি কেমিক্যালগুলো সংগ্রহ করে নিজেদের রেপ্লিকেট করতো। তবে সবসময় আদর্শ কেমিক্যালে ভরা পরিবেশ পাওয়া যায় না। তখন সেই আদি জীবগুলো নিজেদের মৃত সহদরগুলো থেকে কেমিক্যাল নেয়ার চেষ্টা করত। যারা এমন করতে পেরেছে তারা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হতে পেরেছে। এভাবে আসতে আসতে প্রাণীদের খাদ্য আহারের মধ্যে পরিবর্তন আসে। প্রথমে খাদ্যচক্র খুবই অস্থিতিশীল ছিল। কোটি কোটি বছরের নানা খাদ্য বিপর্যয়ের পর আজ এখন আমরা অনেক জায়গায় সুশৃঙ্খল খাদ্যস্তর পেয়েছি। অনেক প্রাণী এই প্রতিকূলতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছে আর সেইভাবেই বিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তিত প্রাণী যারা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় মাইগ্রেশন করে সেটা তারও এক প্রমাণ। এমনকি আজও এমন অনেক স্থান আছে যেখানে খাদ্যস্তর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
(১৬) কিছু প্রাণী ভিন্ন প্রজাতিতে বিবর্তিত হলেও তাদের শারীরিক অনেক মিল পাওয়া যায়। এমনটা কেন? (যেমন জিরাফ ও বাঘ)
জিরাফ, বাঘ তারা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হলেও তাদের গায়ে এক রকমের স্ট্রাইপ বা ডোরা কাটা দাগ আছে। এটা সমাপতনিক বটে । আফ্রিকায় বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে জিরাফের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। তাদের মধ্যে সেই প্রাণীগুলো ন্যাচারাল সিলেকশনে টিকে ছিল যারা নিজেদের পরিবেশের সাথে আড়াল করতে পারতো যাকে বলা হয় “camouflage”। চামড়ার মাধ্যমে পোকা থেকে নিজেদের আড়াল করায় তারা প্রজননে সেই জেনেটিক ইনফো পরের প্রজন্মে দিয়ে দেয়। বাঘের ক্ষেত্রেও তাই। সেই বাঘই টিকে আছে যেটা তৃণভোজী প্রাণীর চোখের আড়ালে থাকলে পেরেছে। সেই ডোরাকাটার জেনেটিক ইনফো পরের প্রজন্ম গুলো বহন করে আসছে।
(১৭) এখন কি বিবর্তন পরিপূর্ণ? সব প্রাণী তো সমৃদ্ধই দেখা যায়!
বিবর্তন প্রতিনিয়ত হয়। এই সমৃদ্ধির শেষ নেই। ধরুন শিকারী প্রাণী সুন্দর করে বিবর্তিত হল। তখন সেই সব শিকারী প্রাণী বেচে থাকার কৌশল শারীরিকভাবে বহন করে সে টিকে থাকে। বিবর্তন সমান্তরালভাবে হচ্ছেই।
(১৮) আমি একজন ধার্মিক। ইসলামে আছে আদম (আ) প্রথম মানব। তাকে ও মা হাওয়াকে আল্লাহ জান্নাত থেকে এখানে পাঠিয়েছেন। মানুষের বিবর্তন কি আদম (আ) এর ঘটনার সাথে সাংঘর্ষিক নয় কি?
এটা নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে বিভিন্নমত আছে। ডঃ জাকির নায়েক মনে করেন মানুষ ব্যাতিত অন্য প্রাণের বিবর্তন আমাদের মানতে সমস্যা নেই। আবার অন্য লেকচারে সে এটাকে হাইপোথেসিস বলে আর কথা বাড়ান না। অন্যদিকে ডঃ রানা দাজানি যিনি একজন মুসলিম বায়োলজিস্ট, তিনি বিবর্তনকে ফ্যাক্ট মনে করেন । তার মতে আদম (আ) এর ব্যাপারে যা বলা আছে সেটা ” metaphor for humanity ‘in general’ হতে পারে। Dr. Yasir Qadhi যিনি একজন বিজ্ঞ ইসলামিক স্কলার তিনি মনে করেন আদম (আ) এর কাহিনীটা হয়তো রুপক। তিনি স্বীকার করেন বিবর্তন একটি ফ্যাক্ট। তবে তিনি হোমো সেমিপেন্ট এর শুরু ৫০,০০০ এর আগে হলে সেটা মুসলিমদের জন্য বিশ্বাসযোগ্য বলে তিনি মনে করেন না। যেটা বিবর্তনের প্রমাণের সাথে খাপ খায় না।
(ভিডিওগুলো দিচ্ছি)

(১৯) মানুষ ভবিষ্যতে কিভাবে বিবর্তিত হবে?
এটা আসলে বলা মুশকিল। তবে অনেকগুলো হাইপোথেসিস আছে এটা নিয়ে। যেমন মানুষের পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুল বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, আমাদের টিস্যু আরও কোমল হয়ে আসবে, চোখ বৃহৎ হবে, লম্বায় বৃদ্ধি পাবে ইত্যাদি। তবে সেটা আসলে বলা মুশকিল। কেননা পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি মানুষের বিবর্তনকে অনুমান করা আরও জটিল করে দিচ্ছে।
(২০) শুনেছিলাম কোথায় জানি ৬০ ফুট লম্বা মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। সেটা কি সত্য ? আমরা কি সেখান থেকে বিবর্তিত হয়েছি?
বেশ কয়েক বছর আগে এমন কিছু ইমেজ ইন্টারনেটে সাড়া ফেলেছিল। যেখানে বলা হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এটা পেয়েছে। পরে যাচাই করে জানা যায় সেটা ছিল ফটোশপ দিয়ে তৈরি একটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিও অস্বীকৃতি জানায়। মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ইন্টারনেটে সাড়া ফেলাই ছিল এই ইমেজের উদ্দেশ্য। আমরা কোন অতিকায় প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়ে এখানে আসিনি। আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন লম্বায় খর্ব।

Sunday, August 30, 2015

বাংলাদেশিজম, সাইন্স ফ্যাক্ট, নাহিদ রেইনস আর কিছু কথা যা হারিয়ে যাওয়ার নয়।

বাংলাদেশিজম ( Bangladeshism ) এর নাহিদ রেইন্স ( Nahid Rains ) এর একটা ভিডিও "
 Science Facts | OMG! The Science Show
 "তে আমি কমেন্ট করেছি। জানি না উনি ভবিষ্যতে আবারও আমার কমেন্ট মুছে দিবেন নাকি কিন্তু তাই এখানে আমার কমেন্টটা অক্ষুত রাখার চেষ্টা করছি। সবাই কমেন্ট করতে পারবেন।




প্রাচীনকাল থেকে পাদ্রিরা/ দরবেশরা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে আসছে এটা  সহজ পন্থায়। প্রথমে এমন কিছু একটা বলতো যাতে মানুষের মনে দুর্বলতা কাজ করে তারপর সেটা ব্যবহার করত মানুষের মনে যে সন্দেহ দূর আছে সেটা দূর করার জন্য।  আপনিও সেই সব ভণ্ড পাদ্রিদের থেকে কম কিছু করলেন না। প্রথমে আপনি এখানে কি চতুরতা করেছেন তা বলবো তারপর আপনার বিজ্ঞান নিয়ে যা বলেছেন তা বলবো।।

প্রথমত ধন্যবাদ ক্যাসপারের অপারেশনের কথা বলার জন্য। আপনার মত চালাক লোকই পারে নিজের সো এর পর্বকে প্রমট করার জন্য মানুষের আবেগকে ব্যবহার করতে। আপনি চাইলেই এটা আলাদা একটি ভিডিও বানিয়ে সেটা ফেসবুক এ Sponsored Ads দিয়ে দিতে। ২-৩শত টাকা খরচ করে আপনি কয়েক হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারতেন। আপনার হেটার গ্রুপ না হয় মেগাবাইট কিনছে সুধুমাত্র আপনাকে নিয়ে ত্রল বানানোর জন্য। কিন্তু আপনি তো পারতেন পকেটের টাকা একটু সঠিকভাবে খরচ করতে ।  তবে সে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চায় আর নিজের ভিডিওর ভিউ কউন্ট বাড়াতে চায় তার কাছে এটাই আশা করা যায়। 

"আমি সিউর দেখার আগে ডিজলাইক দিচ্ছেন" ভাই কথাটা ভাল বলেছেন। আপনার সাথে পারিবারিক শত্রুতা কেন যে মানুষের আমি বুঝি না। আপনি বিজ্ঞানকে অপব্যাখা করছেন এটা তো দোষের কিছু না। আর আপনার ভিডিও তো মানুষ চোখ বন্ধ করেই  সেকেন্ড টু সেকেন্ড ধরে ধরে ভুল বের করে ভিডিও বানাচ্ছে। সেটা নিয়ে তো কিছু বলেন না। আর আপনি চোখ খুলে অনুমান নির্ভর আর ভুল তথ্য দিয়ে মানুষের জ্ঞানের হলুদ আলোকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।  এত মহৎ কাজে লাইক না দেয়াই তো পাপ। ও হ্যা আমি অবশই আপনার ভিডিওতে লাইক দিব। তবে সেটা সাইন্স এর ভুল ব্যাখ্যার জন্য না বরং এত চালাকি করে মানুষের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে নিজের দোষ ঢাকারজন্য  এমন ভিডিও বানানোর জন্য। 

এখন আসি মুল আর ফ্যাক্টগুলো বলতে

1|  3:31   "প্রায়" শব্দটা  কে বলবে? প্রায়  ৮ মিনিট ১৭ সেকেন্ড বললে ঠিক হত।  পৃথিবী কোন স্থির গ্রহ না যে সমসময় একই পরিমান সময় লাগবে। 

২। 3:45  1000 mph বা বরং "প্রায়" 1040 mph. । আর এইবারও প্রায়" শব্দটা বলা ভুলে গিয়েছেন। মনে হয় না ১০৪০ বললে সেটা সাধারণ  মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হত।

৩। 3:49  ৬৭০০০ না বরং প্রায় 67,108 mph। মহাবিশ্ব এমন রাউন্ড ফিগারে চলে না রে ভাই।

৪। 4:08  এক মিলিয়ন না কয়েক মিলিয়ন আর এটা খুব উঠানামা করে । আপনি নিশ্চয়ই গুগুলে "number of earthquakes per year" সার্চ দিয়েই ভিডিও বানিয়ে ফেলেছেন। সেখানেও দেখবেন "several" শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সচেতনতামুলক কথাটি বলার জন্য ধন্যবাদ। পরিসংখ্যান থেকে লব্দ কোন রেন্ডম ইভেন্ট  সাইন্স ফ্যাক্ট না, ফানফ্যাক্ট হতে পারে । 

৫  । 4:31  ভাই এমন ভাবে বললেন যে আকাশের সাথে আপনার দোস্তদোস্ত সম্পর্ক। কমপক্ষে ১০০টি সত্যি!! রিসংখ্যানগত লব্দ কোন কোন রেন্ডম ইভেন্ট সাইন্স ফ্যাক্ট না, ফানফ্যাক্ট হতে পারে। 

৬। 4:35 গতির কথা তো বলেনইনি আপনি । একটা ভাঙ্গা গাড়ি কচ্ছপ গতিতে গেলেও কি ১ ঘণ্টায় যাবে ?  গাড়ির গতি যদি প্রায় ১০০ কিলোমিটার  কিলোপ্রতি ঘণ্টা হয় তখনই সুধুমাত্র ১ ঘণ্টা লাগবে। স্ক্রিপ্টও ঠিক মত লিখতে জানেন না ? 

৭। 5:05 হাহাহাহাহা। মুখে বললেন পৃথিবীর বয়স ৪.৫৬ বিলিয়ন নিচে লেখা উঠে ৪.৫৭।  আসলে বয়স হচ্ছে "প্রায় ৪.৫৪৩ বিলিয়ন বছর"। প্রায় বললে এই পয়েন্টটা দিতাম না।  

৮। 5:16  2 মিলিয়ন বা বরং "প্রায়" ২.২ বিলিয়ন বছর বা প্রায় ২২ লক্ষ বছর

৯।  6:39 পৃথিবীর বড় শিলা না সবচেয়ে ভারি "শিলা বৃষ্টি" যেখানে প্রতিটি শিলার ওজন ছিল প্রায় ১ কেজির মত। ৯২ জন মারা গিয়েছিল সেই শিলা বৃষ্টিতে। "সেই শিলা" "সেই শিলা" বলছেন কেন ভাই বারবার? 

আপনি বললেন "গালিও দিতে পারেন" ।  ঠিকই বললেন কিন্তু আগে আমার সেকেন্ড টু সেকেন্ড ভুল ধরার ক্ষোভে কমেন্ট রিমুভ ঠিকই করেছিলেন। যুক্তি নেয়া কি আপনার কাছে গালির থেকেও কটু? 

যাই হোক ,  ক্যাসপার আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে। ওর জন্য অনেক খারাপ লেগেছে। যতটা সম্ভব ছিল চেষ্টা করা হয়েছিলাম  সহযোগিতা করার । সহযোগিতার ব্যাপারে আশা করি আপনি আর আমি দুইজনই একই গ্রুপ এ ছিলাম। আশা করি কমেন্ট এ আপনার মন্তব্য পাব। ভাল থাকবেন। 


Wednesday, August 19, 2015

বাংলাদেশিজম, সমকামী, নাহিদ রেইনস আর কিছু কথা যা হারিয়ে যাওয়ার নয়।

বাংলাদেশিজম ( Bangladeshism ) এর নাহিদ রেইন্স ( Nahid Rains ) এর একটা ভিডিও "
What if EVERYONE was HOMOSEXUAL in the WORLD? "তে আমি কমেন্ট করেছি। জানি না উনি ভবিষ্যতে মুছে দিবেন নাকি কিন্তু তাই এখানে আমার কমেন্টটা অক্ষুত রাখার চেষ্টা করছি। সবাই কমেন্ট করতে পারবেন।

/////////////////////
 নাহিদ রেইন্স, আপনি খুব উদাহরন দিয়ে সমকামিতা নিয়ে কথা বলেছেন। এ জন্য ধন্যবাদ। অধিকাংশ মানুষ এটাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ বলে আর কথা বাড়ায় না।
তবে আপনার সাথে আমি মোটেই একমত হতে পারলাম না। আর আপনি এখানে একবারও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রয়োগ করেননি যে বিষয়টি প্রাকৃতিক নাকি ঐচ্ছিক। যাই হোক, আমিই বলে দেই। আমি সমকামি সম্পর্কে যতটা জানি এখানে একটু বলি।
১. পৃথিবীর প্রায় ৪০০এরও অধিক প্রজাতির প্রাণী আছে জাদের মধ্যে সমকামিরা আছে। যেসব প্রাণীদের মধ্যে সমকামিতা আছে তাদের সংখ্যা প্রায় ১০%। মানুষও এই প্রাকৃতিক নিয়ম বজার রেখেছে। জরিপ বলে মানুষের মধ্যে ৩.৭% সমকামি।
২. সমকামিতার পিছনে জিন কাজ করে। আর আপনি যে বিষয়ের উপর বেশি মনোযোগ দিলেন মানে "সবাই যদি সমকামি হত" সেটা আদৌ সম্ভব না।
৩। সমকামিরা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পথ বেছে নেয় না। তারা প্রাকৃতিকভাবে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অনাসক্ত। আপনি ধার্মিক হিসেবে এটাকে রোগ বলেন বা যাই বলেন এর জন্য তাকে শাস্তি বা ভুল বলা অযৌক্তিক।
৪। সমকামিরা সাধারনত সন্তান দত্তক নেয়। এটা খুবই মহৎ কাজ। প্ৃথিবীতে অনেক শিশুই এতিম হওয়ার মত দুর্ভাগ্য বহন করে। সমকামিদের এই মহৎ আমাদের দৃষ্টিগোচর করা উচিত না।
৫। ইসলামিক বিশেষজ্ঞ ডঃ জাকির নায়েক আরও কিছু স্কলাররা ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন এই বলে যে অবাধ যৌনতা মানুষকে সমকামি করে তুলে। বিষয়টা খুবই ভুল ও অনৈতিক যুক্তি চয়ন। কেননা এমন অগণিত সমকামীজুগল আছে যারা সারাজীবন একই সঙ্গির সাথে থাকে। ছেলে-মেয়ে জুগলের মতও তাদের মাঝে ভালবাসা ও কমিটমেন্ট আছে এটা স্বাভাবিক।
\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\
(অনেকে আমাকে সমকামী ভাবতে পারে তাই আগেই বলে দেই আমি সমকামী নই ।  বিজ্ঞানকে সমর্থন জানালেই সমকামী হয়ে না। গোঁড়ামিহীন সকল প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানিরা সমকামীর বৈজ্ঞানিক সত্যতাকে স্বীকার করে। )

ভিডিওটি দেয়া হলঃ